শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সাংবাদিকদের ওপর ২৮ অক্টোবরের হামলার ঘটনায় ডিএমপির অনুসন্ধান কমিটি গঠন শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী পাইকগাছার আগড়ঘাটায় ৪দিন ব্যাপী বর্ষবরণের শেষ দিনে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘাটাইলে পুকুর থেকে অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার পাইকগাছায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত নান্দাইলে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ্ ও প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান যমুনা নদী‌তে অষ্টমীর স্না‌নে পুণ্যার্থীরাদের ঢল পাইকগাছার আগড়ঘাটায় ৪দিন ব্যাপী বর্ষবরণের ২য় দিনে ঢালি, জারি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জামালপুরে মহাষ্টমীর স্নান উৎসবে হাজারো পুর্ণার্থীর ঢল সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক এম সুশান্তের গণসংযোগ এলাকা শান্ত রাখার আহব্বান এমপি লাবু চৌধুরীর জামালপুরে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন-লাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে : সাবের চৌধুরী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা দিবে ক্ষুদে ডাক্তার সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান দুঃখজনক : তথ্য প্রতিমন্ত্রী রমজান, ঈদ ও নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে : ডিএমপি কমিশনার শ্রীপুরকে ‘স্মার্ট’ উপজেলা হিসেবে গড়তে চান মৌসুমি সরকার নান্দাইলে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা পাইকগাছায় নববর্ষ উপলক্ষে ৪দিন ব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন এমপি রশীদুজ্জামান সমুদ্রপথ নিরাপদ করতে প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে : নৌ প্রতিমন্ত্রী বিএনপি বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূলে আঘাত করতে চায় : ওবায়দুল কাদের “সংযম প্রদর্শনের” প্রশংসা করতে পশ্চিমাদের প্রতি ইরানের আহ্বান ৩২ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনা : দায়ী চালকের ৩ বছরের সাজা হাইকোর্টে বহাল ইসরায়েল ইরানকে পাল্টা আঘাত করবে, তবে কখন করবে তা অনিশ্চিত : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নিরসন ও গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ চায় বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আল্পনায় বৈশাখ ১৪৩১’ বিশ্বরেকর্ড গড়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী সকল সংস্কৃতির সম্প্রদায়কে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছেন : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্মারক উৎসব বাঙালির বর্ষবরণ সোমালিয়ার জলদস্যুদের চেয়েও বিএনপি বেশি ভয়ঙ্কর : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মিয়ানমারে সেনাবিরোধীরা মরছে কার স্বার্থে?

অনলাইন ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দেশটির ‘গণতন্ত্রকামী’ মানুষের প্রতিবাদ তীব্র হচ্ছে। সর্বশেষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর জোট আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানোর মাত্র একদিন পর বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১ কমপক্ষে ১৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। কোনো কোনো খবরে বলা হয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সামরিক বাহিনী অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহতদের মোট সংখ্যা প্রায় ৪০ এ পৌঁছেছে। ১৯ বছরের তরুণী, ১৪ বছরের বালকও এই হত্যার শিকার।

আমার অনেক ফেসবুকবন্ধু মিয়ানমারের আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। বিশেষ করে নিহতদের ছবি দিয়ে তাদের গণতন্ত্রের জন্য শহীদ আখ্যা দিয়ে ইনবক্স করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার এই তথাকথিত শহীদদের জন্য কোনো অনুভূতি নেই। তাদের জন্য বিন্দুমাত্র সহানুভূতিও জাগছে না মনে, যদিও পোপ ফ্রান্সিস থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক নেতা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার আচরণের নিন্দা করেছেন। জান্তা মানুষকে রাজপথে নামতে দিচ্ছে না এবং ঘোষণা ছাড়াই প্রতিবাদকারীদের গুলি মারছে।

শুরুতে বলছিলাম যে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা প্রাণ দিচ্ছে তাদের জন্য আমার কোনো সহানুভূতি হচ্ছে না। বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাই সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু। ১৯৮১ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ কয়েকদিন রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। হাতেগোনা কিছু সংখ্যক উদ্বাস্তু অন্যদেশেও আশ্রয় নিয়েছে। আজ যারা মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে তাদের কেউ রোহিঙ্গা-গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেনি। নিজ দেশের মানুষকে তাড়িয়ে অন্যদেশে পাঠাতে লজ্জা পায়নি বরং তারা অনেকে এই হত্যা-নির্যাতনের উৎসাহদাতা।

মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের লোক নয়, তারা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে প্রবেশ করে বসতি করেছে। তারা কি নিজ দেশের ইতিহাস পড়ে না! রাখাইনের পুরোনো নাম আরাকান। খ্রিস্টপূর্ব ২৬৫৫ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর ধরে আরাকান তার স্বাধীনসত্তা, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সত্তা, স্বাতন্ত্র্য নিয়ে নিজ বৈশিষ্ট্যে উজ্জীবিত একটি এলাকা।

ব্রিটিশরা যে নৃগোষ্ঠীর তালিকা করেছে তাতে রোহিঙ্গাদের নাম নেই বলে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার বাহানা খুঁজছে মিয়ানমার। ব্রিটিশরা ‘বার্মিজ মুসলিম’ শব্দটি ব্যবহার করেছে, তারা বার্মার ১৩৫টি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিমদের নাম উল্লেখ করেননি বলে ৩০ লাখ লোকের একটি সম্প্রদায় হারিয়ে যাবে!

মিয়ানমার ও আরাকানের মাঝখানে সুদীর্ঘ বিশাল ইয়োমা পর্বতমালা। চট্টগ্রামের সঙ্গে আরাকানের যে ভৌগোলিক নৈকট্য সেটি মিয়ানমারের নেই, এ জন্যই ইতিহাসে দেখা যায় চট্টগ্রাম ও আরাকান এক রাজ্য কাঠামোতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ছিল। আরাকানের প্রধান নদীর নাম ‘কালাদান’। কালাদান বার্মিজ ভাষার শব্দ। ‘কালা’ অর্থ বিদেশি, ‘দান’ অর্থ বিদেশিদের জায়গা। চার হাজার বছরের মধ্যে বার্মার সম্রাট শুধু একবার অল্পসময়ের জন্য আরাকানকে কব্জা করতে পেরেছিল। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বার্মা উপমহাদেশের অংশ ছিল। ব্রিটিশরা শাসনকাজের সুবিধার জন্য ১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল নাফনদীকে সীমানা সাব্যস্ত করে বার্মাকে ভারত থেকে পৃথক করে। ১৯৩৭ সালে পৃথক না হলে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা প্রদানের সময় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ব্রিটিশরা আরাকানকে পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে দিত।

তার যুক্তি রাখাইনে পুলিশ চৌকিতে যে নয়জন পুলিশকে রোহিঙ্গাদের অস্ত্রধারী গ্রুপটি হত্যা করেছে তার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি অবশ্য বলেছেন, সেনারা অন্যায়ের জন্য দোষী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু সু চি তা করেননি।

আইসিজে তার অন্তর্বর্তীকালীন রায় প্রদান করে মিয়ানমারের নেতৃত্বকে গণহত্যা প্রতিরোধের আইনি দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান জানাতে এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ‘তার ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার আদেশ দিয়েছিল। আদালত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অপরাধের প্রমাণ নষ্ট না করার এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করারও নির্দেশ দেন। সু চির সরকার আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেনি বা গণহত্যা বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তও চালায়নি।

সু চির দল রাখাইনে গণহত্যা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। সু চির সমর্থক যারা আজ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষের লোক না, মানবাধিকারের এরা তোয়াক্কা করে না। এরা সু চির সমর্থক, এরা বর্ণবাদী। এরা রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদ করে না, দেশের গণতন্ত্র নয় সু চিকে ক্ষমতায় বসাতে জান্তার গুলিতে প্রাণ দিচ্ছে এরা।

মিয়ানমার ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক জান্তা সরকারের শাসনের অধীনে থাকার কারণে এটিকে দীর্ঘ সময় ধরে ‘সমাজচ্যুত’ দেশ হিসেবে দেখা হতো। ২০১০ সালের পর সামরিক বাহিনী ধীরে ধীরে ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করে, যার জেরে ২০১৫ সালে অবাধ নির্বাচন হয় এবং বিরোধী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে পরের বছর সরকার গঠিত হয়। ৮ নভেম্বর ২০২০ সু চির দল দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হয় কিন্তু নতুন সংসদ বসার নির্ধারিত দিনেই সু চিকে গ্রেফতার করে জান্তা।

সু চি ক্ষমতায় এসে না পেরেছেন সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব থামাতে, না পেরেছেন দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে কিছু করতে। পারেননি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানতো করেননি বরং তার আমলেই রাখাইন রাজ্যে কথিত সন্ত্রাসীদের দমনের নামে সামরিক অভিযানে গণহত্যা চালিয়েছেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছেন।

সু চি ক্ষমতায় এসে প্রমাণ করেছেন তাকে জেলেই ভালো দেখায়। বিশ্বের দৃষ্টি পড়ে তার দিকে, সুনাম আর পুরস্কার আসে তার হাতে। মিয়ানমারে সু চির ক্ষমতায় থাকা কিংবা সামরিক জান্তার ক্ষমতায় থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

লেখক: আনিস আলমগীর , সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


এই বিভাগের আরো খবর