অন্যায় অন্যায্য আর জুলুমবাজির বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। ময়মনসিংহে ঢাকা প্রতিদিন বন্ধ চক্রান্তের বিরুদ্ধে স্বতস্ফূর্ত সাংবাদিক সমাবেশ সেটাই জানান দিয়েছে। নতুন এ বিভাগীয় শহরে শতাধিক সাংবাদিকের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ কর্মসূচি বলে দিলো – সাংবাদিকদের অভিশাপ বড়ই কঠিন, বড়ই নির্মম। অর্থ, বিত্ত, অস্ত্রহীন মানুষের হাহাকার কেবলই ধ্বংস ডেকে আনে, নিঃস্ব করে ছাড়ে। নিকট অতীতে বহু রাঘব বোয়াল, বহু গডফাদারের ন্যক্কারজনক পতন সে কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। শাহেদ খানের মত বিশ্ব প্রতারক নিজেকে সুরক্ষিত করতে দৈনিক পত্রিকার মালিক পর্যন্ত হয়েছিলেন,,, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে রাজকীয় স্টাইলে ঘুরে বেড়ানো জি কে শামীম, রাজাধিরাজ সম্রাট, অজ্ঞাত ক্ষমতায় বিশাল দাপুটে পাপিয়া, কয়েক হাজার কোটি টাকার ধনকুবের ওসি প্রদীপের মতো অনেকেই নিজেদের ধরা ছোঁয়া মুক্ত ভাবতেন। কিন্তু রথি মহারথীদের কারো রেহাই মেলেনি। বাঘে ছুঁইলে এক ঘা, পুলিশে ছুঁইলে নাকি ১৮ ঘা – আর সাংবাদিক নজরদারিতে নাকি অন্তহীন ঘা এর সৃষ্টি হয়।
যারা দুর্নীতি, লুটপাট, অপরাধ অপকর্মে জীবন গড়েন তাদের মাথা তুলে বুক উচিয়ে না চলাটাই উচিত। কাস্টমস এর ডক্টর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এখানেই ভুলটা করে ফেলেছেন। তার বেপরোয়া অর্থ বিত্ত, সহায় সম্পদ নিয়ে ঢাকা প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তথ্যভিত্তিক না হয়ে থাকলে তিনি নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই প্রতিবাদপত্র দিতে পারতেন। কিন্তু সোজাপথে হাঁটেননি তিনি। পীর বুজুর্গগণের মতো চোখের ইশারায় সব সাধন করতে যেয়েই সবকিছু ওলটপালট করে ফেলেছেন জনাব তাজুল।
তার দাবি তিনি কিছুই করেননি, কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ছাপানোর পরেই অদৃশ্য ইশারায় চলমান জাতীয় দৈনিক ঢাকা প্রতিদিনের মিডিয়া ভুক্তি বাতিল করা হলো, ডিক্লিয়ারেশন পর্যন্ত ক্যানসেল হয়ে গেলো। তাজুল সাহেবের বাসার কামলা জে তার হাতে হাতে ঘুরে এই ডিক্লারেশন ও ঘোষণাপত্র বাতিলের চিঠিপত্র, তবু তার নাকি হাত নেই সেখানে! সম্পাদকের টেবিলে বসে তিনি যে ডিএফপি ডিজির ভয় দেখিয়েছিলেন তার দ্বারাই কিন্তু ঘোষণাপত্র বাতিল হয়েছে। তার জুনিয়র যে অফিসার ঢাকার ডিসি ছিলেন তিনিই কিন্তু ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন। বাস্তবেই তাজুল সাহেব কিছুই করেননি, যা করার করেছে ডিজি আর ডিসি। তারা দুজন কেবল তাজুল সাহেবের লোক এই আর কি,,,
যাহোক এবার আসি ভিন্ন প্রসঙ্গে। তাজুল সাহেবের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়ে বললেন, বিষয়টি দুদক যেনো তদন্ত করে এমনকি এতদিন কেনো তার বেশুমার সম্পদের বিবরণ পেয়েও দুদক তদন্ত করলো না এর কারণও দর্শাতে বলা হলো। সেসব নিউজ কেন আদালতের প্রতিবেদকরা নিজেদের পত্রিকায় প্রকাশ করলেন না? আবার হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে দুদক যখন দুইজন সহকারী পরিচালককে তদন্তের দায়িত্ব দিলেন সে খবরও কিন্তু দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা নিউজ করেননি। এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সে ব্যাপারে কারো কোনো ক্ষোভ থাকা উচিত নয়। কারণ সাংবাদিকদের অক্ষমতা, অপারগতাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত। যেসব পত্রিকা, মিডিয়া ব্যবসায়ী শ্রেণীর মালিকানায় প্রকাশ ও পরিচালিত হয় তাদের সবাইকে কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। ফলে রিপোর্টার চাইলেই একজন কাস্টমস অফিসারের বিরুদ্ধে যা কিছু প্রকাশ করার সক্ষমতা রাখেন না। যখন ওই ব্যবসায়ী মালিকদের সঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিরোধ বাধে তখনই কেবল মালিকের মিডিয়া তীব্র রোষে হামলে পড়ে, অন্য সময় নয়। কিন্তু যেসব মিডিয়া মালিক ব্যবসায়ী নন, কাস্টমস এর সঙ্গে খাতির রাখার বলেই নেই,,, তারা কেনো তাজুলের বিরুদ্ধে প্রকৃত সংবাদটি প্রকাশ করলেন না? সে বিষয়ে কিছুই জানার নেই, বলারও নেই। তাদের ইচ্ছা জাগে ই তাই হয়তো করেননি। কিন্তু কোনো মনি ঋষির ইচ্ছা অনিচ্ছার যে সংবাদ চাপা রাখা অন্যায় তা আরেকবার জন্ম নিলে শিখে নেবেন তারা।