ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো : দিনভর অটোরিক্সা চালানো, ভাড়া বৃদ্ধিসহ কয়েকদফা দাবিতে অঘোষিত ধর্মঘটে বিক্ষোভ, ভাংচুর ও অরাজকতা করেছে রাজশাহী মহানগরীর অটোরিক্সা চালকরা। স্ব উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে যোগ না দিয়ে যারা অটোরিক্সা চালিয়েছেন তাদের অটোরিক্সা ভাংচুর ও চালকদের হেনস্তা এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত নগরজুড়ে এ অঘোষিত ধর্মঘট করে অটোরিক্সা চালকরা। এ কারণে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াতকারী পথচারী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বাইরে থেকে যারা নগরে অফিস-আদালতের কাজে এসেছিলেন তারা আরো বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রিক্সা চালকরা ১০ টাকার ভাড়াও ৫০ টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়েই এদিন যাত্রীরা কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যান। কিন্ত সেটির সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। কারণ রাজশাহী মহানগর মূলত অটোরিক্সা নির্ভর। নগরের মধ্যে সিটিং সার্ভিস না থাকায় চলাচলের জন্য অটোরিক্সা ও রিক্সায় একমাত্র অবলম্বন নগরবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার সকাল থেকেই দিনভর অটোরিক্সা চালানো, ভাড়া বৃদ্ধিসহ কয়েকদফা দাবিতে অঘোষিত ধর্মঘটে বিক্ষোভ শুরু করে চালকরা। পরে অটোরিক্সা চালকরা নগর ভবনের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্লোগানও দেয়। অটোরিক্সার চালকরা বলছেন, একবেলা অটোরিক্সা চালিয়ে জমার টাকা উঠানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাহলে নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চলবে। তাই অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধি করা জরুরী। ভাড়া বৃদ্ধি না করা হলে তারা আন্দোলন করবেন। কিন্ত অটোরিক্সা চালকদের এ দাবির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, নগর ট্রাফিক বিভাগ ও অটোরিক্সা চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসে তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্ত তারপরও অটোরিক্সা চালকরা এদিন বিক্ষোভ করে অরাজকতা করেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচী চলাকালে যারা কর্মসূচীতে যোগ না দিয়ে অটোরিক্সা নিজ উদ্যোগে বের করে যাত্রী আনা-নেয়া করছিলেন তাদের অটোরিক্সা চালাতে বাধা ও চালককে মারধর এমনকি অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবহান ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন মোড়ে ও নগর ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। তারপরও অটোরিক্সা চালকরা এদিন বেপরোয়া ছিল।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক অটোরিক্সা চালক অভিযোগ করে বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের কথা ভেবে অটোরিক্সায় যাত্রী আনা নেয়া করছিলাম। কিন্ত বিক্ষোভকারীরা আমাকে অটোরিক্সা চালাতে বাধা দেয় ও আমাকে হেনস্থা করে। বাধা দিলে তারা আমার উপর চড়াও হয়। তার মতো অনেক অটোরিক্সা চালকই এদিন হেনস্থার শিকার হয়। শুধু তাই নয় অটোরিক্সা কাঁচ ভাংচুরও করা হয়।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রিক্সা চালকরা স্বাভাবিক বাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেন যাত্রীদের কাছ থেকে। কেউ অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যান। তবুও চাহিদার তুলনায় রিক্সার সংখ্যা ছিল অপ্রতুল।
আব্দুল্লাহ নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমরা অন্যান্য দিন যেখানে ১৫ টাকা যেতে পারতাম এদিন ৪৫-৫০ টাকা টাকা দিয়ে যেতে হয়েছে। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী রিক্সা পাওয়া যায়নি। তাই নগরে যাত্রীদের কম খরচে যাতায়াতের সুবিধার্তে সিটিং সার্ভিস চালু করা প্রয়োজন। তাহলে অটোরিক্সা চালকরা কাউকে জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করতে পারবেনা।
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মেয়র অটোরিক্সা চালকদের দাবির প্রেক্ষিতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধি করার কথা জানালে অটোরিক্সা চালকরা ধর্মঘট তুলে নেয়। এরপর থেকে অটোরিক্সা স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু হয়।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বান চাকমা বলেন, অটোরিক্সা চালকদের দাবির প্রেক্ষিতে আগেই সভা করে যৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছিলেন মেয়র মহোদয়। তারপরও কেন তারা এমন করছে বোধগম্য নয়। বিশৃঙ্খলা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, জানুয়ারী মাসের কয়েকদিন আগেই অটোরিক্সা চালকরা কর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি না নিয়েই ভাড়া বৃদ্ধি করে। এ নিয়ে নগরজুড়ে হট্টগোল শুরু হয়। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে তাদের বর্ধিত ভাড়া স্থগিত করে দেয়া হয়।
দেশ–বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন।