শিরোনামটা খটকা লাগলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ‘বি’ গ্রুপে চোখ ছোঁয়ালেই দেখবেন, আসলেই টাইগাররা সেমিফাইনালে খেলতে পারে। আর সেই কথাটা খুব একটা আকাশ কুসুম কল্পনাও নয় কিংবা গাছে কাঁঠাল গোফে তেল দেওয়ার মতোও নয়। দরকার কেবল সাহসের ও মানসিক দৃঢ়তার। কারণ গ্রুপে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষ সহজ। এক হচ্ছে নেদারল্যান্ডস, আরেক জিম্বাবুয়ে। শক্তির হিসেব বলছে ডাচদের হারানো সাকিবদের কাছে পানি পান্তার মতো। সিকান্দার রাজার জিম্বাবুয়েও তেমনিভাবে কঠিন প্রতিপক্ষ নয়। মানে অন্তত ২ ম্যাচ জেতার নিশ্চয়তা নিয়েই মাঠে নামতে পারছে টাইগাররা। আর সেই স্বস্তির টনিকেই অন্যদের অস্বস্তিতে ফেলা যাবে খুব সহজে।
এবার সেমিতে যাওয়ার সহজ সমীকরণে দরকার আরও দুই। ত্রিদেশীয় সিরিজের হিসেব বলছে, যদি বাংলাদেশের বোলাররা ভালো করতো তবে পাকিস্তানকে ২ ম্যাচেই হারানো সম্ভব ছিল। তবে বল-ব্যাটে এক হয়ে ভালো খেলতে পারেনি টাইগাররা, সেখানেই এসেছে বিপর্যয়। যদি এবার পাকিস্তানের বাবর আর রিজওয়ান জুটিটাকে লক্ষ্য বানিয়ে কাজ করা যায়, তবে পাকিস্তানকে হারানো দুঃসাধ্য কিছু হবে না। ব্যাপারটা কেবল সাহস ও সঠিক গেম প্ল্যানের।
এবার দরকার আরো একজনকে হারানোর, ভারত সেখানে অনেকখানি কঠিন প্রতিপক্ষ। সেখানে সাউথ আফ্রিকা হতে পারে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ। বলে ব্যাটে প্রোটিয়াদের টক্কর দেওয়া টাইগারদের জন্য ‘সহজ’। যদিও সাকিব আল হাসানের দল সহজ কাজটিই করতে পারে না সহজে। ওপরের হিসেবটা কাল্পনিক মনে হতেই পারে। কারণ সাম্প্রতিক খেলাগুলোতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ সাহসী কোনো খেলা যেমন উপহার দিতে পারেনি, তেমন দলের ভেতর ও বাইরে শৃঙ্খলারও অভাব ছিল যথেষ্ট। এর বাইরে অনুশীলনে অমনোযোগ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবও ছিল চোখের পড়ার মতো। ভুলত্রুটি খুঁজে খেলায় মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে গণমাধ্যমে মুখ দেখাতেই বেশি উদ্যমী দেখা গেছে টাইগারদের। টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম কিংবা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও সাকিবের অবর্তমানে নুরুল হাসান সোহানদের সঠিক পথ বাতলে দিতে পারেননি। কারণ, পাকিস্তানের বিপক্ষের খেলায় দেখা গেছে বাবর-রিজওয়ানদের সাম্প্রতিক খেলা নিয়ে কোনো বোঝাপড়া কিংবা লেখাপড়াও ছিলো না টাইগারদের। প্রতিপক্ষকে না জেনে, তাদের সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষণ না করে; নেটে ধুমধাম অপরিকল্পিত কিছু শট বা বলের প্রাকটিস করে মাঠে নামলে আদৌ ভালো কিছু করা যায় কী? কেবল সংবাদ সম্মেলনে ইম্প্যাক্টের গল্প শোনানো কী বুদ্ধিমানের কাজ? খেলায় তো পরিকল্পনাটা দরকার ম্যাচ বাই ম্যাচ। বুঝতে হয় প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা, কখনো প্লেয়ার বাই প্লেয়ার ধরেও করতে হয় গেম প্ল্যান। মুখস্ত কুমিরের রচনায় সেকালে পরীক্ষায় পাশ করা গেলেও একালের ক্রিকেট খেলা খুবই সৃজনশীল ও মস্তিষ্ক নির্ভর; চাল দিতে হয় গুণে গুণে। না হয় চালের ভুলে মন্ত্রী খোয়া যায়, দেখা যাক সেই চালটা বাংলাদেশ এবার ঠিকঠাক চালতে পারে কিনা? এতো নাকানিচুবানির পরও যদি না শেখা যায়, হুশ না ফেরে তবে টাইগাররা শিখবে কবে?