রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
এরদোয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তুরস্কে পৌঁছেছেন সাহাবুদ্দিন ৩ জুন বিক্ষোভ কর্মসূচি ও কর্মচারী সমাবেশের ডাক সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আমৃত্যু দেশের সেবা করেছেন আফছারুল আমীন : তথ্যমন্ত্রী বাজেট গরিববান্ধব গণমুখী, সমালোচনা গৎবাঁধা : তথ্যমন্ত্রী রাশিয়া থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টন সার আসবে ইউক্রেনে রাশিয়ার জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী পুতিন ১৮ কোটি মানুষ মোবাইল সিম ব্যবহার করে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৩ কোটি দেশবিরোধী অপশক্তির হাতে দেশ নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : তথ্যমন্ত্রী গুগলের দেওয়া তথ্যে গাজীপুরে শিশু যৌন নিপীড়নকারী এক যুবক গ্রেপ্তার ‘দুগ্ধ খাতে সফল ৪১ জন খামারি ও উদ্যোক্তাকে প্রদান করা হলো ডেইরি আইকন পুরস্কার’ ভোলায় নানা আয়োজনে পালিত হলো বিশ্বদুগ্ধ দিবস ভেস্তে গেল শান্তি আলোচনা: সুদানে মার্কেটে রকেট হামলায় নিহত অন্তত ১৮ ফ্যাশনের মোড়কে তামাকের নেশা: নিষিদ্ধ হোক ই-সিগারেট স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট বাজেট হয়েছে : সাদ্দাম হোসেন বিদেশে যেতে পারবেন সম্রাট, ফিরে পেলেন পাসপোর্ট পরকীয়ার জেরে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীর যাবজ্জীবন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুখবর নেই বাজেটে গুণগত মানসম্পন্ন প্রকৌশল কাজই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মার্কিন নতুন ভিসা নীতি কর্তৃত্ববাদের নয়া হাতিয়ার ১৬ জুন ‘ফুলজান’ হয়ে আসছেন মিষ্টি জান্নাত অরুণা বিশ্বাসকে পরীমণির হুঁশিয়ারি! বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী মেসির পিএসজি ছাড়ার খবর নিশ্চিত করলেন গালটিয়ের বিশ্বে ধনীর তালিকায় ফের শীর্ষে ইলন মাস্ক গোপালগঞ্জে ছেলের বিরুদ্ধে অন্ধ বাবার সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার হাসিনা ও এরদোয়ানের শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রথিতযশা শিল্পীদের সরকার যথাযথ সম্মাননা প্রদান করছে : সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা বাস্তবায়ন জরুরি জেসিকে শুভেচ্ছা জানালেন সাকিব নান্দাইলে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ব্রহ্মপুত্রের কানে হ্যান নদীর কলরোল

অনলাইন ডেস্ক :
সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২, ৩:৪৫ অপরাহ্ন

ঢাকা প্রতিদিন সাহিত্য ডেস্ক : সময় হয়ে গেলে উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। যারা আগে এসে উপস্থিত হয়েছেন তাদের কাছে আয়োজক হিসেবে নিজেকে অপরাধী মনে হতে থাকে। শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহের মুসলিম ইনস্টিটিউটে ‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’র আয়োজনেও তেমন লাগছিল। প্রচণ্ড গরমে এমনিতেই কাহিল। তার ওপর দিলওয়ার হাসানের ইচ্ছায় ময়মনসিংহের রসগোল্লা ও মালাইকারি। তার ওপর ইস্কনের নিরামিষ রেস্তোরাঁর নানা পদে দুপুরের খাবার। এমন ভরভরন্ত পেট নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলাম একটু আগেই। আয়োজকদের তো আগে যেতেই হবে।

ময়মনসিংহের মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজন ‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’র। এই আয়োজনে (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিক থেকে উপস্থিত হচ্ছিলেন প্রিয় মুখগুলো, প্রিয় মানুষগুলো। একেকটা মুখ দেখি আর মনের মধ্যে এক একটা বরফের মারবেল গড়িয়ে যায়। এমনিতে এবার মৌসুমের বিলম্ব। ভাদ্রের গরম এসেছে আশ্বিনে। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে প্রিয় মুখের চেয়ে প্রশান্তির তো আর কিছু হয় না। ময়মনসিংহ শহরের কাছের উপজেলা তারাকান্দা থেকে সরকার আজিজ, আলিফ আশরাফ, নীহার বকুল, বায়েজিদ লিটন। আমার কচি বয়সের বন্ধুদের দেখে প্রাণ শীতল হয়ে এল। চলে এলেন শুভ্র সরকার, সহিদ আমিনী রুমি, শরৎ সেলিম, সীমান্ত জসিম, রোকন শাহরিয়ার সোহাগ, জেবুন নেছা রিনা, লাবীব আব্দুল্লাহ, আলমাস হোসাইন শাজা, আলিমুল করিগর, মোস্তফা তারেক, হাসিনা বেলী, ডেভিড মন্ডল, মোজাম্মেল হক, আহমদ শাহাব উদ্দিন, জয়ন্ত কুমার তালুকদার শিবু, অনন্য রাজ্জাক, রিয়েল আব্দুল্লাহ, আকন্দ লতিফ, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আরাফাত রিলকে, মুঈন হোসেন, কামরুল হাসান রিয়েল, তাসাদ্দুক হোসেন, মুহাম্মদ আসাদ, এবং গোবিন্দ বণিক। এলেন লড়াকু মানুষ আবুল কালাম আল আজাদ। কয়েকদিন আগেই বলাইশিমুলে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে লড়ে গেছেন এলাকাবাসীর অধিকারের পক্ষে। বছর বিশেক আগে হুটহাট যাদের বাসায় দুপুরের খাবারের জন্য হানা দিতাম এলেন সেই কথাসাহিত্যিক শাহীদা হোসেন রীণা এবং আকন্দ লতিফ। এলেন অসুখ ও অসুস্থতায় একটু কাবু হয়ে যাওয়া কবি শামসুল ফয়েজ ও মাহমুদ আল মামুন। এলেন বামপন্থি লেখক অনূপ সাদি এবং দোলন প্রভা। অনূপ সাদি যা লিখবেন ভাবেন তা লিখেই ছাড়েন। খ্যাতি বা যশের জন্য লেখেন না তিনি, লেখাটাও তার কাছে রাজনীতির মতোই সামাজিক দায়বদ্ধতা। এলেন মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। এরপরই প্রিয়দর্শিনী আপা কবি রোকসানা আফরিন। তাদের পাশেই নীল জিন্সে দারুণ তাজা হান্নান কল্লোল। ময়মনসিংহ শহরে নামলে যাদের সাথে দেখা হবেই সেই নম্রভাষী সাংবাদিক ও গল্পকার কামরান পারভেজও এলেন। ভিডিওগ্রাফির লটরবহর নিয়ে এলেন আমার সহকর্মী সাংবাদিক কাজী গোলাম মোস্তফা মুন্না। ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের স্বেচ্ছাসেবক আলোকচিত্রী কিশোর ত্রিপুরাও হাজির। এরই মধ্যে চলে এলেন আরও অনেকেই। তরুণ কবি ও শিক্ষক সাঈদ ইসলামও হাজির হয়ে গেলেন বাইকে চড়ে।

‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’য় আলোচনার আয়োজন ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’ বই নিয়ে। উজান প্রকাশনের এই আয়োজনে বিশেষ আলোচক কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান, আলোচক প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার স্বপন ধর, ছড়াকার ও বিজ্ঞান-লেখক চয়ন বিকাশ ভদ্র, কবি কাজী নাসির মামুন, কবি ও প্রাবন্ধিক আল মাকসুদ, কবি সরোজ মোস্তফা, কথাসাহিত্যিক উম্মে ফারাহানা এবং তরুণ কবি জনপদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক কবি সাঈদ ইসলাম। সভাপতি কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফরিদ আহমেদ দুলাল। সভাপতি ও আলোচকরা এসে গেলেন ঠিক সময়েই। তারা উল্টেপাল্টে দেখলেন উজান প্রকাশনের বইগুলো।

এই ফাঁকে বলে রাখি কেন ময়মনসিংহে এই আয়োজন। ময়মনসিংহ মহানগর এবং আশপাশের জেলা ও উপজেলায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দমোহন কলেজ, মুমিনুন্নেসা কলেজ, নেত্রকোণা কলেজ এবং শহীদ স্মৃতি কলেজসহ উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে আরও বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বিবেচনায় এই মহানগর সবসময় এগিয়ে থাকে। শিল্প-সাহিত্যের চর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা আয়োজনে সারা বছরই সরব থাকে এই নগর। এসব বিবেচনায় আমরা ময়মনসিংহ মহানগরকে বেছে নিয়েছিলাম আমাদের ‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’র জন্য।

ময়মনসিংহের কবিদের কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কবিতা পাঠ করেন সরকার আজিজ, শরৎ সেলিম, আরাফাত রিলকে ও আলিমুল কারিগরসহ ময়মনসিংহে বসবাস করা কবিদের বেশ কয়েকজন। এরপর শুরু হয় মূল আলোচনা। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেখক ও সাংবাদিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ। তিনি ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’ বই দুটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এছাড়া ‘কোরিয়ার গল্প’ বইটির অনুবাদকদের একজন এবং সম্পাদক। তিনি কোরিয়ার ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে কথা শুরু করেন। বলেন বইগুলোর প্রকাশনার বিভিন্ন দিক এবং অনুবাদের নানা দিক ও প্রক্রিয়া নিয়ে। বিশ্বসাহিত্যের প্রভাবশালী ভাষা ও সংস্কৃতি এবং চলতি ধারার সাহিত্যের বাইরে কেন মনোযোগ দেওয়া দরকার সে বিষয়ে বলেন তিনি। বাংলাসাহিত্যের প্রচুর অনুবাদ নানা ভাষায় হওয়া দরকার এবং নানা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ প্রচুর বই বাংলাভাষায় অনুবাদের বিষয়ে জোর দেন তিনি। তাঁর এই স্বাগত বক্তব্যের পরই শুরু হয় মূল আলোচনা।

শুরুতেই আলোচক নেত্রকোণার দুর্গাপুরের তরুণ কলেজ-শিক্ষক ও কবি জনপদ চৌধুরী। ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’র আলোচনা করতে গিয়ে এই দুই বইয়ের লেখা কীভাবে বিভাষার সাহিত্য হয়েও সার্বজনীন তা তুলে ধরেন। বিভাষার সাহিত্যের প্রচুর অনুবাদের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি তাতে ‘উজান বইযাত্রা’ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তাঁর আলোচনার পরপরই কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গল্পকার উম্মে ফারহানা কথা শুরু করেন। ফারহানার আলোচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওঠে আসে। সালমান রুশদিকে হত্যার চেষ্টা কিংবা রোহিন্তন মিস্ত্রির বইয়ের বিরুদ্ধে শিবসেনার প্রতিবাদের প্রসঙ্গ টেনে রিয়ালিটি ও হাইপার-রিয়ালিটির কথা বলেন তিনি। ফিকশন যে কখনো কখনো বাস্তবতার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং বাস্তব কোনো আন্দোলনের চেয়েও বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেসব প্রসঙ্গ ওঠে আসে তার বক্তব্যে। ট্রান্সলেশন স্টাডিজের পড়ানোর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যের সাহিত্যের নানা দিক ও প্রবণতা তুলে ধরে জোর দেন কোরিয়ার সাহিত্যের মতো প্রাচ্যের নানা দেশের সাহিত্যের অনুবাদের মাধ্যমে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করার ওপর। কোরিয়ার গল্পের নানা দিক তুলে ধরে অনুবাদগ্রন্থের কিছু দিকের সমালোচনা করেন তিনি। ভাষা ব্যবহারের কিছু ত্রুটি তুলে ধরে এসব ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়ার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়া ‘কোরিয়ার গল্প’ গ্রন্থে কে কোন গল্প অনুবাদ করেছেন সেটি উল্লেখ থাকলে ভালো হতো বলে মত দেন তিনি।

কবি ও সাহিত্য-সমালোচক, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা তাত্ত্বিক বিবেচনায় না গিয়ে সাহিত্যের প্রাণ ছোঁয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্য আর বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষের অনুভূতির সাথে কোরিয়ার সাহিত্যের সমাজ ও মানুষের অনুভূতির মিল-অমিল তুলে ধরেন। তিনি দূর দেশ কোরিয়ার কবি ও কথাসাহিত্যিকদের সঙ্গে বাংলাসাহিত্যের কবি ও কথাসাহিত্যিকদের ভাবের মিলের জায়গাগুলো নিয়েও তুলনামূলক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সেখানেই এই অনুবাদ সার্থক হয়ে ওঠে যেখানে এই বইগুলোর লেখা দেশকালের দূরত্ব পেরিয়ে এসে আমাদের প্রাণ স্পর্শ করে।’

কবি ও প্রাবন্ধিক আল মাকসুদ সাহিত্য অনুবাদের মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান আমাদের কীভাবে সমৃদ্ধ করে, কীভাবে তা আমাদের সমাজ ও মানসকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘উজান প্রকাশন এই ধরনের আরও অনুবাদের মাধ্যমে বাংলাভাষার পাঠকদের সঙ্গে দূরপ্রাচ্যের সাহিত্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়া কাজ অব্যাহত রাখবে।’

মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কবি কাজী নাসির মামুন বলেন, ‘সস্যুর বলছেন ভাষাই পৃথিবীকে নির্মাণ করে। ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে হযরত আলী বলেন, মনুষ্য তার জিহ্বার নিচে প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। আবার বৌদ্ধ দার্শনিক দিঙনাগ বলেন, ভাষার সম্পর্কের স্বরূপ প্রভেদমূলক। ভাষাতাত্ত্বিক সস্যুরের কথার সঙ্গে এসব কথার দারুণ মিল পাওয়া যায়। এসব কথার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখব প্রাচ্য অনেক আগেই ভাষা সম্পর্কিত অনেক আধুনিক ও উত্তরাধুনিক ধ্যানধারণা পোষণ করত। অনুবাদের ঘাটতির কারণে আমাদের পাশ্চাত্য কেন্দ্রিকতা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা সাহিত্যের মতো পাশ্চাত্যের সাহিত্য অনুবাদ হলে এই যে পাশ্চাত্য কেন্দ্রিকতা সেটা থাকত না এবং বিশ্বময় ধারণার ভারসাম্য তৈরি হতো। এই ধরনের অনুবাদ সেই জায়গাটি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, “‘কোরিয়ার গল্প’ এবং ‘কোরিয়ার কবিতা’র কবি-লেখকদের মধ্যে কোনো শিল্পতাত্ত্বিক চাপ নেই বলে মনে হলো। স্ফূর্ত এবং সাবলীল বলার ভঙ্গিতে কোথায় যেনো পশ্চিমা রীতির বাইরে নিজেদের সোজাসাপ্টা কথাগুলো বলে ফেলার প্রবণতা আছে। এরই মধ্যে শ্লেষ, কৌতুক, বিদ্রূপ, দার্শনিকতা, ঐতিহ্যিক প্রবণতা সব একাকার হয়ে যায়। ইউরোপের লেখার ভাববস্তুতে যেমন রগরগে কাঁচামাল শিল্পের ভাঁপ দিয়ে পরিবেশন করা হয়, কোরিয়ার সাহিত্য ওই রকম মনে হলো না। মনে হলো বেশ উপাদেয় একটা রান্না করা বস্তু। সব পাঠক যার স্বাদ পেতে পারে। ‘উজান বইযাত্রা’ ‘কলোনিয়াল হ্যাঙ ওভার’ পরিহার করে ইউরোপ ছেড়ে এশিয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে পারছে, এটা খুব ভালো লাগল।”

ছড়াকার চয়ন বিকাশ ভদ্র কথা বলেন কোরিয়ার গল্প নিয়ে। তিনি শহরের মুমিনুন্নেসা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। লেখালেখি করেন বিজ্ঞান, প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও নিসর্গ নিয়ে। তিনি কোরিয়ার গল্পের আঙ্গিক ও বিষয়গত নানা দিক নিয়ে কথা বলেন। আধুনিক কোরিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার উত্থানের ইতিহাসের পথ ধরে আলোচনা করেন সংকলিত কয়েকটি গল্প নিয়ে। তিনি বলেন, “কোরিয়ার সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানতে হলে ‘কোরিয়ার গল্প’ বইটি পড়তে হবে। কোরিয়ার গল্প নিয়ে এত বড় আয়োজন বাংলাদেশে আর হয়নি। কোরিয়ার বিশশতকের কথাসাহিত্যের পুরো চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা আছে এই সংকলনে।”

ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়ে কাজ করেন ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক স্বপন ধর। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অন্য ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের লেনাদেনা কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে সে বিষয়ে খুব গভীরে গিয়ে আলোচনা করেন তিনি। চর্যাপদের কবিদের থেকে আধুনিক কবিতার পঞ্চপাণ্ডবদের প্রসঙ্গ টেনে ভাব ও ভাষার লেনাদেনার নানা নজির হাজির করেন তিনি। এই আলোচনার সূত্রেই তিনি তুলে ধরেন কোরিয়ার সাহিত্য এবং ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’ বই দুটির উপযোগিতার কথা।

দীর্ঘদিন ধরে কথাসাহিত্য ও অনুবাদ দিয়ে কাজ করছেন দিলওয়ার হাসান। তাঁর উল্লেখযোগ্য বেশকিছু অনুবাদ গ্রন্থও রয়েছে। বিশেষ আলোচক হিসেবে তিনি ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’র অনুবাদ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে কীভাবে লেখাগুলো আমাদের হয়ে গেল সে কথা তুলে ধরেন। এশিয়ার যে দেশগুলো আমাদের দূর প্রতিবেশি তাদের সাহিত্যের এই ধরনের অনুবাদ পরস্পরকে আরও কাছে নিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। দিলওয়ার হাসান বলেন, ‘লেখাগুলো ইংরেজি থেকে অনুবাদ হওয়ার চেয়ে মূল ভাষা থেকে অনুবাদ হলে সৌকর্য ও নান্দনিকতা এবং মূল ভাষার মাধুর্য আরও বেশি উপভোগ্য হতো।’

কবি ফরিদ আহমদ দুলাল নেতৃত্ব দিচ্ছেন ময়মনসিংহ বিভাগের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও। সভাপতির আলোচনায় তিনি ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’র অনুবাদ বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এক ভাষার কোনো লেখা যখন অন্য ভাষায় অনুবাদ হয় তখন সেটি প্রথমত মূল ভাষার রস ও সৌন্দর্য হারায়। সেটি যখন আবার আরেকটি ভাষায় অনুবাদ হয় তখন তা আরেক দফা মূল ভাষা এবং দ্বিতীয় ভাষার রস ও সৌন্দর্য হারায়। এভাবে আসলে রস হারিয়ে হারিয়ে থাকে আসলে নিরস আঁটি আর ছোবড়া। এই আঁটি আর ছোবড়ার ওপর আবার রস স্থাপনের কাজটিই করেছেন এই বইগুলোর অনুবাদক ও সম্পাদকেরা।’ ফরিদ আহমদ দুলাল এই ধরনের একটি আয়োজন ময়মনসিংহে করার জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

কোরিয়ার সাহিত্য যেহেতু আমাদের এখানে খুব পঠিত ও চর্চিত নয়, সেহেতু এই ধরনের সাহিত্যের কোনো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা একেবারে সহজ কাজ নয়। এই অসহজ কাজটাকেই সহজ করে তুলেছেন তরুণ কবি ও শিক্ষক সাঈদ ইসলাম।

তরুণ কবি রোকন শাহরিয়ার সোহাগ স্বপ্রণোদিতভাবেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন বইমেলার। মিলনায়তনের বাইরে দারুণ গুছিয়ে স্টল সাজিয়ে বসে গেলেন তিনি উজান প্রকাশনের সব বই নিয়ে। এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত তারুণ্যই আশা জাগিয়ে রাখে ভবিষ্যতের, আশা জাগিয়ে রাখে ময়মনসিংহের শহরের সংস্কৃতি ও সাহিত্যের।

ময়মনসিংহের এই আয়োজন সফল করে তোলার নেপথ্য বড় ভূমিকা রেখেছেন কবি শামীম আশরাফ। নিজের প্রতিষ্ঠান গ্রাফিত্তি ও পরম্পরার কাজ তো আছেই, এরপরও আছে সারাদিনের সাংগঠনিক তৎপরতা। চরম ব্যস্ত এই তরুণ যেন না বলতে জানে না। সবকিছুতে যে সম্মত তাকে নিয়ে শুরুতে আমাদের সংশয় ছিল। প্রথমে খুব একটা গা না করায় সেই সংশয় রূপ নিচ্ছিল দুঃশ্চিন্তায়। অনুষ্ঠানের দিন যত ঘনিয়ে এল ততই সে দেখাতে থাকল তার কারিশমা। অনুষ্ঠানের আগের দুদিনে আমরা বুঝে গেলাম, কোনো চিন্তা নেই। শেষ দিকে শামীম আশরাফ যখন আমাদের ফোন দিচ্ছিল এটা-ওটা কীভাবে হবে তা জানতে তখন নির্ভার হয়ে আমরা শুধু বলছিলাম, ‘নিজের মতো করে নিন।’ ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা সাংগঠনিক ও আনুষ্ঠানিক কর্মযজ্ঞে সে যে অনেকের কাছে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে, তা কেন ও কীভাবে হয়েছে, উপলব্ধি করলাম এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

প্রকাশনা সংস্থা উজানের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে কোরিয়ান লিটারেচার ট্রান্সলেশন ইনস্টিটিউট। ধারাবাহিক এই আয়োজন ‘উজান বইযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তীরবর্তী শহরকে সিউলের হ্যান নদীর গল্প ও কবিতা শুনিয়েছি আমরা। এরপর হ্যান নদীর কলরোল কিংবা গল্প-কবিতা শোনাব বুড়িগঙ্গা, পদ্মা ও কর্নফুলীকে, শোনাব এসব নদীর তীরের শহর ও জনপদকে।
ঢাকা প্রতিদিন/এআর


এই বিভাগের আরো খবর