ঢাকাপ্রতিদিন স্বাস্থ্য ডেস্ক : পারকিনসন্স একধরণের নিউরো-ডিজেনারেটিভ বা স্নায়বিক রোগ। মস্তিষ্কের ডোপামিন তৈরির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই রোগ হয়। ডোপামিনের ঘাটতি হলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং এতে শরীরের চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়, পাশাপাশি আরও কিছু জটিলতা দেখা দেয়। ওয়েবএমডির প্রতিবেদনে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ এবং বিস্তারিত উঠে এসেছে। এই রোগ সাধারণত ৬০ বছরের পরে দেখা যায়। ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রায় ১ শতাংশ মানুষ এবং ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৫ শতাংশ মানুষ পারকিনসন্সে আক্রান্ত হন। তবে তরুণদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ খুবই কম।
এখনো পর্যন্ত পারকিনসন্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। বর্তমানে চিকিৎসা মূলত লক্ষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে সহায়তা করার দিকে কেন্দ্রীভূত। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, জেনেটিক কারণ ও কিছু নির্দিষ্ট বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা পারকিনসন্সের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট প্রোটিনের উপস্থিতির সঙ্গেও এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ: ভয়াবহ পারকিনসন্স রোগে ভুগলে প্রথম অবস্থায় বুঝত পারা যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলো:
কাঁপুনি: হাত বা পা হঠাৎ কাঁপতে শুরু করতে পারে। অনেক সময় আঙুল ঘষে ঘষে নাড়ানোর অভ্যাস দেখা যায়, এমনকি বিশ্রাম নেয়ার সময়ও।
হঠাৎ শরীর অবশ হয়ে যাওয়া: স্বাভাবিক কাজ করতে বেশি সময় লাগে। হাঁটাচলা ধীর হয়ে পড়ে। হঠাৎ শরীর অবশ হয়ে যায় তখন কাজ করতে বেশ সমস্যা হয়।
শক্ত পেশি: শরীরের কিছু অংশ শক্ত হয়ে যায়, নড়াচড়া সীমিত হয় এবং ব্যথাও হতে পারে।
ভারসাম্য সমস্যা: অনেক সময় মানুষ সামনে ঝুঁকে হাঁটে, ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন: কথা বলার গতি কমে যায়, স্বর নিস্তেজ হয়ে পড়ে বা উচ্চারণ অস্পষ্ট হয়।
লেখার সমস্যা: হাতের লেখা ছোট হয়ে যায়, দ্রুত লেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
আবেগজনিত পরিবর্তন: বিষণ্নতা, উদ্বেগসহ নানা মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়।
গিলতে অসুবিধা: গলার পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় গিলতে সমস্যা হয়, লালা জমে থাকে।
মূত্রত্যাগ ও মলত্যাগে জটিলতা: অনেকেই প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন।
ঘুমের সমস্যা: ঘন ঘন জেগে ওঠা, অস্থিরতা বা ঘুম না আসার সমস্যাও দেখা দেয়।
খাবার খেতে সমস্যা: রোগ গুরুতর হলে মুখের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খাওয়ার সময় সমস্যা হয়।
পারকিনসন্স একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা, সচেতনতা এবং জীবনযাপনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে রোগীর জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। বয়স্কদের মধ্যে হালকা কাঁপুনি বা চলাফেরায় সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি, কারণ দ্রুত শনাক্তকরণই হতে পারে সুস্থতার প্রথম ধাপ।
ঢাকাপ্রতিদিন/এআর